environment as a political issue

পরিবেশ যখন রাজনীতির বিষয়

দেশের সংবিধান পরিবেশ রক্ষায় শাসক এবং নাগরিক দুজনকেই তার দায়-দায়িত্ব স্মরণ করিয়েছে।তবু ক্রমাগত উদাসীনতা শিকার হয়ে পরিবেশ আজ বিপন্ন।১৯৭২  সালের সম্মেলন থেকে শুরু করে হালফিলের বাকু, গ্রেট থুনবার্গের প্রতিবাদ – গঙ্গা দিয়ে কত জল বয়ে গেল! তবু পরিস্থিতিতে কোনও বদল হল না। 

মানব সভ্যতায় ব্যর্থতার নবতম সংযোজন মহাকুম্ভ।পৃথিবী আজ গভীর অসুখে ভুগছে।তার মধ্যেই উন্নয়ন আর বিশ্বায়নের অজুহাতে পরিবেশ নিধনের যজ্ঞ চলছে।সবুজ অর্থনীতির বালাই নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে তাই সুভাষ শর্মা বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া মামলায় বলতে হচ্ছে, “ensure no environmental degradation takes place”. বিশ শতক বিশ্বায়নের গতিতে যে দূষণের যাত্রা শুরু করেছিল একবিংশ শতকে এসে তা যে শুধু মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে তা-ই নয়, দূষণ আজ দুর্নীতিতে প্রভাব ফেলেছে। দূষণ রুখতে নেপাল যেখানে সেদেশের সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মেনে এভারেস্ট অভিযান বন্ধ করতে পারে, সেখানে কলকাতার সাড়ে তিন হাজার জলাশয় ভরাট। উল্লেখ্য যে, কলকাতার সবুজ কমেছে ৩০শতাংশ। 

রাষ্ট্রসংঘ সতর্কবার্তা জারি করেছে, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব সব থেকে বেশি পড়বে এশিয়ায়। অথচ,পরিবেশ সচেতনতার পরিবর্তে পরিবেশ দূষণের কুফলকে একশ্রেণীর অসাধুচক্র তাকে আর্থিক মুনাফা লাভের পন্থা হিসেবে ব্যবহার করছে।

ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল জানাচ্ছে, দেশের ১৩ হাজার ৫৬ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জবরদখল হয়ে গেছে।বর্তমানে পরিবেশ রাজনীতির সহজ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। হাইকোর্ট যেখানে বলছে,নির্বিচারে গাছ কাটা মানুষ খুনের থেকেও বেশি অপরাধ, গোড়াবর্মন মামলায় আদালত বলছে, জঙ্গল থেকে একটু ঘাসও সরান যাবে না– সেখানে তথ্য বলছে, বনের চোরাশিকারিদের আধিক্য বাড়ছে। রাষ্ট্রসংঘ সতর্কবার্তা জারি করেছে, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব সব থেকে বেশি পড়বে এশিয়ায়। অথচ,পরিবেশ সচেতনতার পরিবর্তে পরিবেশ দূষণের কুফলকে একশ্রেণীর অসাধুচক্র তাকে আর্থিক মুনাফা লাভের পন্থা হিসেবে ব্যবহার করছে।

ওয়াটার কমিশনের রিপোর্ট বলছে, দেশের জল ধারণের ক্ষমতা কমছে। সব থেকে খারাপ অবস্থা উত্তর ভারতে, যেখানে সঞ্চিত জলের পরিমাণ মাত্র ২৫ শতাংশ। শুধু জল নিয়ে হরিয়ানা আর দিল্লির মধ্যে বিবাদ। বিষয় এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, আদালতে দিল্লি অভিযোগ করছে, হরিয়ানা নিয়মমতো তাদের জল সরবরাহ করছে না। এদিকে দ্বারেকেশ্বর নদীতে জল শুকিয়ে গেলে বাড়ছে বালি চুরি। কোপাই নদী ভরাটের অভিযোগ উঠছে। উন্নতির অজুহাতে শিকার ব্রহ্মপুত্রও। শুধু পরিবেশ দূষণের কারণে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক ক্ষতি ৩৫০০ কোটি টাকা। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ২০২৩ বলছে, এভাবে চলতে থাকলে এশিয়া আফ্রিকার দেশগুলোতে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। উল্লেখ্য,ইতিমধ্যে ধানের বার্ষিক ক্ষতির হার ৩৫ শতাংশ। 

জঙ্গল কেটে সাফ করা, বন্য প্রাণী চুরি – সবটাই রাজনীতির সৌজন্যে! তবু ভালো খবর বঙ্গে বিপন্ন প্রজাতিকে বাঁচাতে ১৩ টি হেরিটেজ সাইট তৈরি করা হয়েছে।

পরিবেশ প্রতিকূলতার প্রভাব এসে পড়েছে শিশু স্বাস্থ্য।পরিবেশগত কারণে শিশুরোগ ৩০ শতাংশ বেড়েছে। উল্লেখযোগ্য,প্রতিকূল পরিবেশের কারণে স্কুলে ৭০ শতাংশ উপস্থিতিতে হার কমেছে,স্কুল ছুটের পরিমাণ বেড়েছে ২৭ শতাংশ।১৩ থেকে ১৭ বছরের শিশুরা পড়াশোনা ছেড়ে কৃষিকার্যে যুক্ত হয়েছে।প্রবল গরমে শুধু ২০২৪ সালে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে দেশে ৭৩৩ জন। ছুটির হার বেড়েছে,পঠন পাঠন কমেছে। এনভায়রনমেন্ট ইনডেক্সে ভারতের স্থান ১৭৬।

পরিবেশের কুফলের শিকার অর্থনীতি থেকে মনোজগৎ। করোনা পরবর্তী সময়ে পরিবেশ সচেতনতার করুন ছবি দেশ থেকে বিদেশ। হারিয়ে গেল ভেনেজুয়েলার শেষ হিমবাহ। অসময়ের বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে ব্রাজিল কেনিয়া থেকে দুবাই।দাবানলে ছাই হয়ে গেল দক্ষিণ কোরিয়ার ১৩০০ বছরের মন্দির গৌনসা, উত্তরাখণ্ডের ৬৮৯ হেক্টর জমি। প্রচন্ড দাবদাহে বিপর্যস্ত নকশালবাড়ির চা বাগান। গরমে কলকাতা টপকে যাচ্ছে জয়সলমিরকে।এত কিছুর পরেও বোধ ফিরছে না। পশ্চিমের দেশগুলো অভিযোগ করছে, দূষণের নাম করে এশিয়ার দেশগুলো তাদের উন্নয়নকে আটকে দিতে চাইছে।ভারত বারবার কার্বন কমানোর পক্ষে দাঁড়ালেও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।বরং রাজনীতি চলছে। রাষ্ট্রনেতারা উন্নয়নের খতিয়ান পেশ করতেই ব্যস্ত।তাঁরা ভুলে যান উন্নয়ন আর বিকাশ এক নয়। তাই স্বাস্থ্য উপেক্ষিত। আগামীর দিকে একটা পঙ্গু প্রজন্মের হাতছানি। 

বর্তমানে পরিবেশ ব্যাহত হবার পিছনে রয়েছে ব্লগার আর হোটেল ব্যবসায়ীদের আঁতাত। বেআইনি নির্মাণ, ক্রমাগত মানুষকে প্রভাবিত করে সুস্থ পরিবেশকে ব্যাহত করছে এই চক্র। পর্যটনের দোহাই দিয়ে তারা অচিরে আঘাত হানছে অরণ্যের অধিকার, সেই সমস্ত মানুষের সুস্থ জীবন।

ছটপুজোকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্র সরোবর বির্তক,বইমেলার ধুলো নিয়ে বিতর্ক অথচ যখন-তখন মাইক নিয়ে রাজনীতির প্রচার, বিজয় উল্লাস আর ডিজে গানে ভোজপুরীর এতটাই দাপট যে, ভরা গরমে কলকাতার ক্রসিংয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রহসন মনে হয়। মানসিকতার অবক্ষয়। জঙ্গল কেটে সাফ করা, বন্য প্রাণী চুরি – সবটাই রাজনীতির সৌজন্যে! তবু ভালো খবর বঙ্গে বিপন্ন প্রজাতিকে বাঁচাতে ১৩ টি হেরিটেজ সাইট তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু দীঘা মন্দারমনিতে যেভাবে সমুদ্রকে অবরুদ্ধ করে হোটেল বাড়ছে তাতে হাইকোর্ট চিন্তিত। 

জোশিমঠ ধসের পর বিজ্ঞানীদের চিন্তা দার্জিলিংকে নিয়ে। পরিকল্পনাবিহীন উন্নয়নে পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে।তাই ডুয়ার্সে হরিণের মুখে যখন চিপসের প্যাকেট নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ছবি ভাইরাল হয় তখন পরিবেশবিদদের চিন্তা বাড়ে। কারণ, তাঁরা জানেন, শুধু পরিবেশগত কারণে কোটি কোটি

মানুষ আজ দেশ ত্যাগ করছে। দেশে দেশে বাড়ছে উদ্বাস্তু সমস্যা। নীরব সচেতনতা। বর্তমানে পরিবেশ ব্যাহত হবার পিছনে রয়েছে ব্লগার আর হোটেল ব্যবসায়ীদের আঁতাত। বেআইনি নির্মাণ, ক্রমাগত মানুষকে প্রভাবিত করে সুস্থ পরিবেশকে ব্যাহত করছে এই চক্র। পর্যটনের দোহাই দিয়ে তারা অচিরে আঘাত হানছে অরণ্যের অধিকার, সেই সমস্ত মানুষের সুস্থ জীবন। 

পরিবেশ নিয়ে যেহেতু রাজনীতি করা যায় না তাই এই বিষয়টা শিশু পাঠ্যের মত। ব্রিগেডের প্রবল জনপ্লাবনের পর তিলোত্তমার কপালে জোটে প্লাস্টিক। শাসক যদি  উদাসীন হয়, প্রজাও তো সেই পথ ধরবে! তাই জনগণের নীল সাদা রঙের ডিভাইডারে পানের পিক। ছাত্ররা গাছ কাটার প্রতিবাদ করলে তাদের মিথ্যে মামলার মুখে পড়তে হয়, যেমনটা তেলেঙ্গানাতে ঘটলো।রাজনীতির উল্লাসে জীবন হাসছে চোরাবালিতে। তবে আশার কথা শোনাচ্ছে খড়গপুরের আইআইটি, রুক্ষতা নয়, এবার সবুজের পথে থর মরুভূমি।